মেঘে ঢাকা স্বপ্ন

ভালবাসি তোমায় (ফেব্রুয়ারী ২০১৪)

সোহাগ বিশ্বাস
  • ১৩
জীবনের অন্তহীন স্বপ্নগুলো মনের অগোচরেই কিভাবে যেন ধীরে ধীরে মুছে যেতে শুরু করেছে । কোথায় হারিয়ে গেল আমার সেই স্বপ্নমাখা কৈশোরের দিনগুলো । সেই অবিরাম ছুটাছুটি কিংবা মনের অজান্তে হৃদয়ে অচেনা কারো হাতছানী । নিয়তি আজ আমাকে অজস্র আকাক্ষার দ্বারপ্রান্তে এনে দাড় করিয়ে দিয়েছে , যার সম্মুখভাগ শুধুই তমসাচ্ছন্ন । আজ বলার দিন, হ্যা আজ আমার বলার দিন । তোমাকে আমি কতটুকু ভালবেসেছিলাম, আজো তোমাকে আমি কতটা ভালবাসি, তা তোমার বা আমার জীবনে আজ কোন গুরুত্বই বহন করে না । তবু আজো বসন্ত এলে কোকিল ডাকে, বর্ষায় বনে বনে কদম ফোটে । তেমনি আমিও সযতনে তোমার জন্য গুরুত্বহীন ভালবাসা পুষে রাখি আমার হৃদয়ের মণিকোঠায় ।
ভাবনাহীন, কর্মহীন, ভাবলেশহীন জীবনটা বেশ আনন্দেই তো কাটছিলো । পড়ালেখা, স্কুলে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারা সবমিলিয়ে বলতে গেলে অনাবিল সুখেই কাটছিল আমার দিন ।

তারপর মনের অজান্তেই সুখের শিরোমণি হয়ে তুমি এলে । আমি তখন সবে নবম শ্রেণীতে উঠেছি । আমাদের বাড়ি প্রত্যন্ত গাঁয়ে । স্কুল থেকে বাড়ির দুরত্ব খুব বেশী নয় । কাঁচা রাস্তা, ভরপুর ধূলায় পরিপুর্ণ । ধূলার কথা এজন্যই বললাম কারণ প্রথম তোমায় যেদিন দেখেছিলাম আমি সেদিন তোমার পা দুখানী ছিল ধূলায় পরিপুর্ণ । ঘটনাটি এরকম, আমি স্কুলে যাওয়ার জন্য রাস্তায় উঠেছি এবং ধীরে ধীরে হাটছি । হটাৎ ছোট্ট একটা মেয়ে আমাকে ক্রস করে সামনে এগিয়ে গেল । আকাশী-নীল ফ্রক পরা, পিঠে কালো ব্যাগ ঝোলানো । যে বিষয়টা আমাকে কিছুটা অবাক করল তা হল তার পা দুখানী খালি এবং চটি জোড়া ছিল হাতে ঝোলানো । সম্ভবত পথে আসতে চটি ছিড়ে গেছে । মুখটা পিছন থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম না । চেনা কেউ নয়, এটুকু বুঝতে পারছিলাম শুধু । সিক্স ক্লাসে অনেক নতুন মেয়ে এসেছে, এ হয়তো তাদেরই একজন । যা হোক স্কুলে গেলাম ।
স্কুলে পৌছে মনে মনে মেয়েটিকে খুঁজছি , কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না । ক্লাসে বসে আমার প্রিয় গানটি, আমার পূজার ফুল, এ গানটি গুনগুন করে গাইছি । আমার বন্ধু সুদীপ এসে বলল, বন্ধু পূজা নামে একটি মেয়ে ৬ষ্ট শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে । আমি বললাম, তাতে কি ? ও বলল, ওর সাথে প্রেম করবি । আমার কথার মাঝেই একটি মেয়ে ক্লাসে ঢুকলো, আমি অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম । শ্যামলবরন মুখ, ভাসা ভাসা চোখ, অসম্ভব মায়াবী তার চেহারা । আসার পথে যাকে দেখেছিলাম, এ সেই । যেমন ঝড়ের বেগে এসেছিলো, তেমনি ঝড়ের মতই বেরিয়ে গেল রুম থেকে । সুদীপ বলল এর নামই পূজা । আমি মনের অজান্তেই বলে উঠলাম, পূজা হোক আর যাই হোক , আমি একেই ভালবাসি ।

প্রথম প্রথম ভালবাসাটা কোন ভাবেই প্রকাশ করতে পারছিলাম না । আমার একটা সহজাত গুণ আছে, আমি খুব সহজেই ছোটদের সাথে মিশতে পারি । তাছাড়া ঐ মেয়েটার সাথে আমার কাকাত বোন লাখি পড়ত । ওরা সবাই সকাল সকাল স্কুলে এসে লুকোচুরী খেলতো । আমি ওদের সাথে লুকোচুরী খেলতে চাইলাম, ওরা হাসতে হাসতে আমাকে খেলায় নিলো । খেলতে খেলতেই জানতে পারলাম ওর নাম পূজা নয় কনা । দুদিনেই কনার সাথে খুব ভাব হয়ে গেল । কিন্তু লজ্জাজনক একটা ব্যাপার হল, ও আমার সাথে তুই-তুকারি বাচ্যে কথা বলে , বন্ধুদের হাসাহাসির পাত্র হয়ে গেলাম । টিফিন হলে ও আমার হাত ধরে বলে, চল খেলতে যাই । বন্ধু-বান্ধবীরা মিট মিট করে হাসে । কিন্তু কোনভাবেই ওকে ভালবাসার কথাটা বলতে পারলাম না । একদিন ছুটির পর ওকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললাম, কনা তোকে আমি খুব ভালবাসি । তোদের সাথে মিশি, খেলি শুধু তোর জন্য । কনা কোন কথা না বলে চলে গেল । পরদিন ওরা যখন খেলছিল তখন আমি খেলায় যোগ দিতেই কনা মাথা ধরার নাম করে ক্লাসে চলে গেল । বুঝলাম আমাকে এড়িয়ে চলছে । মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল । এরপর থেকে ওদের সাথে খেলা বন্ধ করে দিলাম । ওরা ডাকলেও যেতাম না ।
এভাবে কিছুদিন চলল । পাশাপাশি ক্লাস তবুও কনাকে দেখার ইচ্ছে দমন করে মাথা নিচু করে থাকতাম । একদিন একটা সাদা ক্যাপ স্কুলে নিয়ে গেছি , লাখী আমার হাত থেকে সেটা কেড়ে নিলো । একটু পরে দেখি ক্যাপটা কনার মাথায় । ক্যাপটা ওর মাথায় দেখে মনটা খুশিতে ভরে উঠল । লাখিকে ডেকে বললাম, ক্যাপটা ওকে দিলি কেন ? লাখি বলল, আমার কাছ থেকে দেখি বলে নিয়েছে, যখন বললাম এটা আমার না দাদার তখন বলল এটা তাহলে আমারই , আর ফেরত দেব না । আমার মনে হল, ও বুঝি আমাকে ভালবেসে ফেলেছে । এভাবে দিন পেরোতে পেরোতে ১৪ই ফেব্রুয়ারী আসলো । স্কুলে গেছি, লাখি একটা কার্ড দিয়ে গেল । তাতে লেখা, আমি তোমাকে ভালবাসি । নিচে লেখা , কনা বসু । আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম । তখনি একটা কার্ড যোগাড় করে তাতে ঝরনা কলম দিয়ে ওর নাম লিখে ওকে দেয়ার জন্য লাখীর কাছে দিলাম । ও নিলো না এবং জানালো ও কিছুই নিতে পারবে না । আমি ওর দেয়া কার্ডটা ছিড়ে কুচি কুচি করে ফেললাম এবং ওর গায়ে ছুড়ে মারলাম । ভালবাসার দিনটা কাটল দুঃসহ যন্ত্রনার ভিতর দিয়ে ।

এর ঠিক তিন দিন পর কনা একটা চিঠি দিল । তাতে লেখা, আমার ভুল হয়ে গেছে, বিশ্বাস কর, আমি তোমাকে ভালবাসি, ভালবাসি ভালবাসি । আমি সকল অভিমান ভুলে গেলাম । শুরু হল ভালবাসার অধ্যায় । যার সাথে অবাধে ঘুরে বেড়িয়েছি , খেলেছি এখন তার দিকে তাকাতে লজ্জা লাগে । কথা বলতে গেলে বুক কেঁপে ওঠে ।
তবুও তাকে পেয়ে আমার জীবনটা পরিপুর্ণ হয়ে উঠল । তাকে ভালবাসার পর সে বা আমি কোনদিন স্কুল বন্ধ দিয়েছি বলে মনে পড়ে না । পাশাপাশি ক্লাস হওয়ায় টুকরো টুকরো কাগজে মনের কথা লিখে দুজনে চালাচালি করতাম । তাছাড়া ওর সাথে আগে থেকেই খুব মিল থাকায় স্যাররা কোন সন্দেহ করতো না । জরি মেশানো কালির কলম দিয়ে ওকে আমি চিঠি লিখতাম । কনা ঐ জরি মুখে লাগিয়ে আমার সামনে দিয়ে হেঁটে বেড়াতো । মনটা আমার খুশিতে ভরে উঠতো । বসন্তের ফুলগুলো যেন শুধু তার জন্যই ফুটতো । স্কুল ছুটির পর যখন দুজন একাকী রাস্তায় বাড়ি ফিরতাম, সারাক্ষণ আমি গাঁদাফুলের পাপড়ি ছিড়ে তার গায়ে ছুড়ে মারতাম । সবচেয়ে বেশী আনন্দ হতো বর্ষণমুখর দিনগুলোতে । স্কুলে যখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ত , মৃদু আলো আধাঁরিতে আমি বিভোর হয়ে তার মুখের পানে চেয়ে থাকতাম । সে আমার গায়ে বৃষ্টির জল ছুড়ে মারতো ।

এভাবে দিন কাটছিল । আমি স্কুল থেকে বের হয়ে দূরের একটি ইন্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে ভর্তি হলাম । ব্যাক্তিগত মোবাইল না থাকলেও মাঝে মাঝে মোবাইলে কথা বলতাম । চিঠিও আদান-প্রদান হত । দুর্ভাগ্যবশত একটা চিঠি পরিবারের হাতে পড়ে যায় । ওর পরিবার সবকিছু জানার পর ওর বাবা আমার সাথে ফোনে কথা বলে এবং অনুরোধ করে কনাকে ভুলে যেতে । ওর মা আমার বাসায় এসে বিনীত ভাবে প্রার্থনা করে যেন আমি কনাকে ভুলে যাই, তার ভবিষ্যত যেন নষ্ট না করি । ওর মা আমার হাত ধরে বলে যেন ব্যাপারটা গোপন থাকে ।

আমি সারারাত ভেবে ভেবে ওকে ভুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই । ও চিঠি দিলে উত্তর দিইনা, ফোন দিলে কথা বলিনা । বুকের কষ্ট বুকে চেপে রাখি ।
একবার গ্রামে বেড়াতে গেছি । ঘুরতে বের হয়েছি , হটাৎ কনার সাথে দেখা । কনা দীর্ঘক্ষণ কাঁদার পর তার অপরাধ জানতে চাইল, আমি নিরবে পাশ কাটিয়ে চলে এলাম ।

শহরে ফেরার কিছুদিন পর হটাৎ করেই ওর বিয়ে হয়ে যায় । তীব্র কষ্টে ও যন্ত্রনায় কিছুদিন আমি পাথর হয়ে রইলাম । জীবনটা অর্থহীন মনে হতে লাগল । কনার একটি চিঠি এসেছিল, শুভ কামনায় ভরা চিঠি । আমি যেন আমার ভালবাসার মানুষকে নিয়ে সুখে থাকি ।

হ্যা, কনা । আমি সুখে আছি । বড় কষ্টের এ সুখ, বড় বেদনায় ভরা তোমার ঐ আশীষ বাণী । তুমি কোনদিন জানতেও পারবেনা কনা, ভালবাসা নিজের হাতে কবর দেয়া কত কষ্টের, কত বেদনার কত যন্ত্রনার । শুণ্যের উপর তৈরী ঘরে বাস করছো তুমি । তোমার নিচে রয়েছি আমি মিথ্যা খুঁটি হয়ে । ভয় হয় কবে যেন মিথ্যার ভর বইতে না পেরে ভেঙ্গে পড়ে যাব । তাহলে যে তোমার বড় ক্ষতি হয়ে যাবে কনা । না , মিথ্যার ভর আমাকে বইতেই হবে আজীবন । আমি যে তোমায় ভালবাসি কনা, অনেক ভালবাসি তোমায় আমি ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মহিউদ্দীন সান্‌তু পেয়ে হরানোর বেদনা সত্যিই খুব কষ্টকর, ভালো লেগেছে লেখা, কষ্ট পেলাম গল্পে। মিথ্যে খুঁটিতেই ভর করে আজীবন সুখে থাকুক কনা। শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
ওয়াহিদ মামুন লাভলু আবেগভরা ভালবাসার চমৎকার গল্প। শ্রদ্ধা জানবেন।
ভালো লাগেনি ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
আল জাবিরী ভালো লিখেচেন চমত্কার
ভালো লাগেনি ৩১ জানুয়ারী, ২০১৪

৩০ অক্টোবর - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪